আজ, ১ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ভারতের পেট্রোল ও ডিজেলের দামে (petrol diesel price) কোনো বড় পরিবর্তন দেখা যায়নি। দেশের প্রধান তেল বিপণন সংস্থাগুলি—ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (IOC), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (BPCL) এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (HPCL)—প্রতিদিন সকাল ৬টায় জ্বালানির দাম সংশোধন করে। গত কয়েক মাস ধরে জ্বালানির দামে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে, যা গ্রাহকদের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। আজকের দামের বিস্তারিত চিত্র এবং এর পিছনের কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
প্রধান শহরে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম (petrol diesel price)
দিল্লিতে আজ পেট্রোলের দাম (petrol diesel price) প্রতি লিটার ৯৪.৭৭ টাকা এবং ডিজেলের দাম ৮৭.৬৭ টাকা। মুম্বইয়ে পেট্রোলের দাম ১০৩.৫০ টাকা এবং ডিজেলের দাম ৯০.০৩ টাকা প্রতি লিটার। কলকাতায় পেট্রোল ১০৫.০১ টাকা এবং ডিজেল ৯১.৮২ টাকা। চেন্নাইয়ে পেট্রোলের দাম ১০০.৮০ টাকা এবং ডিজেল ৯২.৩৯ টাকা। বেঙ্গালুরুতে পেট্রোল প্রতি লিটার ১০২.৯২ টাকা এবং ডিজেল ৮৮.৯৯ টাকা। এই দামগুলি গত কয়েকদিন ধরে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের স্থিতিশীলতার প্রতিফলন।
হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ নিয়োগ: মাসিক বেতন ১.২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত
দাম নির্ধারণের পিছনে কারণ
ভারতে জ্বালানির দাম নির্ধারিত হয় ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং পদ্ধতির মাধ্যমে, যা ২০১৭ সালের জুন থেকে চালু হয়েছে। এই পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম (ব্রেন্ট ক্রুড), রুপির বিনিময় হার, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কর, পরিবহন খরচ এবং ডিলার কমিশনের মতো বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলারের কাছাকাছি রয়েছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কম। এছাড়া, রুপির মূল্য ডলারের তুলনায় ৮৩.৫০-এর কাছাকাছি স্থিতিশীল রয়েছে, যা জ্বালানির দামে বড় পরিবর্তন আটকে রেখেছে।
রাজ্যভিত্তিক দামের তারতম্য
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম (petrol diesel price) ভিন্ন হয়, কারণ রাজ্য সরকারগুলি ভিন্ন হারে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আরোপ করে। উদাহরণস্বরূপ, আন্দামান ও নিকোবরে পেট্রোলের দাম সবচেয়ে কম—৮২.৪৬ টাকা প্রতি লিটার, এবং ডিজেল ৭৮.০৫ টাকা। অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশে পেট্রোলের দাম সর্বোচ্চ—১০৯.৩৬ টাকা এবং ডিজেল ৯৭.২৯ টাকা। পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার দাম ছাড়াও গ্রামীণ এলাকায় পেট্রোল ১০৫-১০৭ টাকা এবং ডিজেল ৯১-৯৩ টাকার মধ্যে রয়েছে। এই তারতম্য পরিবহন খরচ এবং স্থানীয় করের ওপর নির্ভর করে।
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব
বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম গত কয়েক মাসে ওঠানামা করলেও সম্প্রতি কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। আমেরিকার স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) থেকে তেল মুক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা কমে যাওয়ায় সরবরাহের চাপ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আগামী দিনে তেল উৎপাদক দেশগুলি (ওপেক) উৎপাদন কমায়, তবে দাম বাড়তে পারে।
সরকারি নীতি ও জনজীবনে প্রভাব
গত ১৫ মার্চ ২০২৪-এ সাধারণ নির্বাচনের আগে কেন্দ্র সরকার পেট্রোল ও ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ২ টাকা কমিয়েছিল। এরপর থেকে দামে আর কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি। এই স্থিতিশীলতা পরিবহন ব্যয় এবং পণ্যের দামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। ডিজেলের দাম কম থাকায় কৃষক এবং বাণিজ্যিক যানবাহন চালকদের জন্য কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। তবে, পেট্রোলের দাম এখনও ১০০ টাকার ওপরে থাকায় শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি চাপে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জ্বালানির দাম জিএসটি-র আওতায় আনলে করের হার কমে দাম অনেক কমতে পারে। বর্তমানে পেট্রোল ও ডিজেলের ওপর ১০০%-এর বেশি কর আরোপিত হয়, যেখানে জিএসটি-র সর্বোচ্চ হার ২৮%। তবে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ই এই খাত থেকে বিপুল রাজস্ব পায়, তাই তারা জিএসটি-র আওতায় আনতে নারাজ।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
আগামী দিনে বর্ষা শুরু হলে কৃষি কার্যক্রম বাড়বে, যার ফলে ডিজেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে ভারতেও তার প্রভাব পড়বে। তবে, বর্তমানে দাম স্থিতিশীল থাকায় গ্রাহকরা কিছুটা নিশ্চিন্ত। সরকারি তেল সংস্থাগুলি জানিয়েছে, তারা বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেবে।
ভারতে আজকের পেট্রোল ও ডিজেলের দাম গ্রাহকদের জন্য একটি মিশ্র অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। শহরাঞ্চলে পেট্রোলের দাম উঁচু থাকলেও, ডিজেলের স্থিতিশীলতা পরিবহন ও কৃষি খাতে স্বস্তি দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় কারণগুলির ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে দাম কোন দিকে যাবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে, বর্তমানে এই স্থিতিশীলতা অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত।